মৃত্যুযাত্রা
---প্রকাশ চন্দ্র রায়
¤ বেশ শক্ত করে পাকাতে শুরু করলো সে তার নীল রঙের মাঝে ছোট ছোট গোলাপ ফুল আঁকা ওড়নাটা । খুবই পছন্দের এ ওড়নাটা সুমিত'ই গিফট করেছিল ঊনিশতম জন্মদিনে । পাকাতে পাকাতে বেশ মোটা একটা দাঁড়াশ সাপের আকৃতি দিল প্রিয় ওড়নাটাকে । কিভাবে ফাঁস লটকাতে হয় তা তো জানে না সে তবুও নিজ মেধা খাটাতে চেষ্টা করছে । নতুন কেনা হালকা পেষ্ট কালার সেলোয়ার কামিজ পরনে বেশ সুশ্রী আর স্মার্ট লাগছে নিজেকে তবুও মরতেই হবে তাকে, এখনই, একটু পরেই । ঢং করে রাত ১টা বাজা'র সংকেত দিল দেয়াল ঘড়িটা । আর তো দেরী করা যায় না, চট করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে বসার টুল'টা এনে সিলিং ফ্যানের নীচে মেঝেতে রাখলো, তারপর দাঁড়াশ সদৃশ পাকানো ওড়নাটা হাতে নিয়ে টুলে উঠে দাঁড়াল । বাড়ীর সবাই ঘুমে অচেতন, এটাই সুবর্ণ সুযোগ সুইসাইড করার, তা না হলে রাত পোহালেই বরপক্ষের লোকজন আর অন্যান্য আত্মীয় স্বজন, পাড়া পড়শীর লোকজনে ভর্তি হয়ে যাবে বাড়ী । যে দেহমন উৎসর্গ করেছে সে প্রাণাধিক সুমিতকে, সে দেহমন আর কোনক্রমেই দিতে পারবে না দ্বিতীয় কাউকে । আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মেলামেশায়, ভালবাসা'য় একাত্ম হয়ে গেছে তার দেহমন প্রাণ সুমিতের সাথে । এমতাবস্থায় সব ঘটনা জেনে ফেলে তার অভিভাবকগণ ফলে তাড়াহুড়া করে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য । পাকানো ওড়নার এক মাথা ফ্যানের ডান্ডার সাথে খুব টাইট করে বাঁধলো সে । অপর মাথাটায় বড়সড় একটা ফাঁস তৈরী করে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে গলায় নামালো ফাঁসটা । তারপর ফাঁসের গিঁটটা মাথার পিছনে ঘুরিয়ে নিলো । নিরানব্বই শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে, নীচে তাকালো । এখন বাকী মাত্র এক শতাংশ- পা দিয়ে টুলটা'কে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে হবে, তাহলেই ঝুলিয়ে যাবে সে ফাঁসে । হঠাৎ ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো টেবিলে রাখা মোবাইল ফোন.... চমকে উঠে দ্বি-ধায় পড়ে গেল । কি করা উচিৎ এখন ? ফোনটা কি রিসিভ করবে, নাকি করবে না ? পরক্ষণে মনে হল সুমিত যদি রিং দিয়ে থাকে - আশা হতাশার দোলায় দুলতে লাগল মন তার । মৃত্যুযাত্রার প্রাক-মুহুর্তেই মনের পর্দায় ভেসে উঠলো সুমিতের নিরীহ সুন্দর মুখখানা এবং বিগত দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু মধুময় ঘটনার প্রতিচ্ছবি
ক্রিং ক্রিং শব্দে আবার বাজছে মোবাইল ফোন, আশা-নিরাশার দোলায় দোদুল্যমান মন তার, কি করবে ভাবছে ! নাহ্! ফোনটা রিসিভ করে দেখতেই হবে, এতরাতে কে কল করছে ! তাড়া-হুড়োতে গলার ফাঁস না খুলেই টুল থেকে নীচে নামতে গেল সে। পায়ের ধাক্কা লেগে উল্টে গিয়ে হাত দেড়েক দূরে ছিটকে পড়লো টুলটা। ঝুলে পড়লো গোটা দেহ...,হাছড়ে পাছড়ে খুলতে গেল গলার ফাঁস। ততক্ষণে শক্ত করে চেপে বসেছে ফাঁসটা গলাতে, শতচেষ্টাতেও আর আলগা করতে পারলো না ফাঁসটাকে। হাঁসফাঁস-হাঁসফাঁস করতে করতে, কিছুক্ষণ হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ির পর নিথর হয়ে ঢুলতে লাগলো অসাড় দেহটা। ক্রিং ক্রিং ক্রিং শব্দে বেজেই চলেছে মোবাইলের রিং টোন..। (সমাপ্ত)