কাকে বলে প্রেম
প্রকাশ চন্দ্র
.
ট্রেন থেকে নেমে মোবাইল ফোনে টাইম দেখলো মানিক চন্দ্র-রাত বারোটা বেজে চৌদ্দ মিনিট । স্টেশন থেকে বাড়ীর দূরত্ব তিন কিলোমিটার, যদি মেইন রোড ধরে যাওয়া যায় । সোজা একটা পায়ে হাঁটা পথ আছে ধানক্ষেত পাটক্ষেত এর মধ্য দিয়ে দুই কিলোমিটার প্রায়, কিন্তু সে-পথে গেলে পেরুতে হয় মহাশ্মশান । রাত গভীরে শ্মশানের ধার দিয়ে সহজে একাই কেউ যেতে চায় না । মানিকের অবশ্য বিশেষরকমের ভয়ডর নেই । ঢাকা ভার্সিটির বিজ্ঞানের ছাত্র সে , ভুত-টুত কিছু বিশ্বাস করে না । খুব সাহস করে সোজা পথটা দিয়েই হেঁটে চলল সে । আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ঘন অন্ধকারে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে চলছে বাড়ীমুখে একা । কিছুদূর এগুতে ঝিরঝিরে বৃষ্টিপাত শুরু হলো যেন কুয়াশা পড়ছে এতই সূক্ষ্ম বৃষ্টির কণা, উপড়দিকে তাকালো মানিক, কিচ্ছু দেখা যায় না, শুধু নিকষ কালো অন্ধকার । হা হা হা, খটখটে অশরীরি হাসির শব্দে চমকে উঠলো সে । কে ? কিরে মানিক, উপড়দিকে কি দেখছিস? আজ তো অমবস্যার রাত, চাঁদ-টাদ কিচ্ছু পাবি না, কবিতা লেখার ধান্ধা বাদ দে, তার'চে গল্প লেখ, ভূতের গল্প । আরে ! অতুলদা তুই ! আর বলিস না ভাই, আজ অর্পিতার বিয়ে, আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, সইতে পারলাম না বিচ্ছেদ জ্বালা,,.
তাই চলে গেলাম ওর আগেই দূরে-বহদূরে, বুঝিয়ে দিলাম অর্পিতাকে প্রেম কাকে বলে । তারমানে ? অতুলের কথার মাথামুন্ড কিচ্ছু বুঝলো না মানিক । পিছন ফিরে দেখল, অতুল ফিরে যাচ্ছে, গায়ে তার সাদা মার্কিন কাপড় জড়ানো,,এত অন্ধকারেও বেশ সাদা ধবধরে দেখাচ্ছে । এতক্ষণ আলাপের ঝোঁকে অতটা খেয়াল করেনি সে, এখন যেন কেমন সন্দেহ আর ভয় ভয় করতে লাগলো তার । সাহস করে বলল, কোথায় যাচ্ছো অতুলদা ? ঐ তো ভাই শ্মশানে আগুন জ্বলছে, মানুষজনের কথাবার্তাও শোনা যাচ্ছে, এটুকু এগিয়ে গেলেই সব বুঝতে পারবি, যা, চলে যা । এই বলে অতুল যেন অতল অন্ধকারে অকস্মাৎ হারিয়ে গেল । কিয়ৎক্ষণ থ মেরে থেকে ঘোরের মধ্যেই যেন এগিয়ে চলল মানিক । শ্মশানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, নিশ্চয়ই কোন মৃতদেহকে দাহ করা হচ্ছে । কাছে আসতেই মন্টু আর ঝন্টু ছুটে এসে বলল, কে ওটা মানিকদা নাকি ! কিরে মন্টু, কাকে পোড়াচ্ছিস তোরা ? ঝন্টু থমথমে মুখ করে বলল, তুই কিচ্ছু শুনিসনিরে মানিক দা ! মানিক মাথা নাড়লো । মন্টু বিস্তারিতভাবে যা বুঝালো তা শুনে দৃঢ়বিশ্বাসী মানিকের বিশ্বাস একদম নড়বড়ে হয়ে গেল । আজ অর্পিতার বিয়ে তা জেনে একগাদা ঘুমের বড়ি খেয়ে সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করেছে সে,,আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে তাই তাড়াহুড়ো
করে পোড়ানো হচ্ছে । আতঙ্কে আর উত্তেজনায় চিৎকার করে উঠলো মানিক, কাকে ? মানিকের এহেন অদ্ভুত আচরণে থতমত খেয়ে গেল মন্টু ও ঝন্টু । ঝট করে সমস্বরে উত্তর দিল অতুলদাকে ।।
*** ৩১ মে ২০১৯ শুক্রবার ।