(অণুগল্প)
প্রেমের টক্কর
প্রকাশ চন্দ্র রায়
বোন সেলিনাকে ভীষণ ভালবাসে সেলিম,অপরপক্ষে প্রচণ্ড অবজ্ঞা করে একই পাড়ার তারই সমবয়সী কাঞ্চনকে। সেলিনা দশটাকা চাইলে জোর করে এক'শ টাকার নোট গুঁজে দেয় সে আদুরী বোনের হাতে,এতই গভীর টান তার বোনের প্রতি।
আজ বাজারে যাওয়ার সময় বোন বলেছিল,
- ভাইয়া কয়েকটা ক্যান্ডি আনিস তো, আমার জন্য।
- ফেরার সময় ক্যান্ডিভর্তি গোটা একটা বৈয়ামই কিনে এনেছে সে কলেজ পড়ুয়া ধুমরী বোনের জন্য। বোনের জন্য এতটাই ভালবাসা তার শুধু একটা ব্যাপারে মনটা কাঁচা খুব-কবি কাঞ্চনের বিশেষ ভক্ত সেলিনা,বলা যায় এক নম্বরের ফ্যান।
- কবি কাঞ্চন ফেসবুকে লেখালেখি করে,বেশকিছু পত্র-পত্রিকায় লেখা বেড়িয়েছে তার। সেলিমের ঈর্ষা আর ঘৃণা এখানেই। সে-ও তো সাহিত্যচর্চা করে কিন্তু কাঞ্চনের মত অত মনোগ্রাহী হয়না তার লেখাগুলো!
হাজার হাজার ফলোয়ার বা ফ্যান জুটেছে কাঞ্চনের। ঈর্ষাকাতর সেলিম, কাঞ্চনকে ক্ষ্যাপানোর জন্যই কারনে-অকারনে ব্যঙ্গ করে কবি-কবি বলে ক্ষ্যাপাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে বটে তাতে মোটেও বিরক্ত বা বিচলিত হচ্ছে না সহজ সরল আর বিনয়ী কবি-কাঞ্চন রহমান।
আজ বাজারে ঢোকার মুখে টি-স্টোল'টায় হৈ-হট্টগোল শুনে এগিয়ে গিয়ে দ্যাখে কবি কাঞ্চনকে নিয়ে যেন উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই। তাকে দেখে ব্যঙ্গ করে চেঁচিয়ে উঠল কয়েকজন,,
-এই যে এসে গেছে একজন হাতুড়ে কবি,যার কবিতা কুকুর বিড়ালও পড়ে না!
-কথাশুনে হো হো করে হেসে উঠল সবাই। আরেকজন প্রশ্ন করলো,
--হাতুড়ে কবি!সে আবার ক্যামন? হাতুড়ে ডাক্তার তো জানি।
-এদিক-সেদিক হাতড়িয়ে পাছড়িয়ে,এর-ওর দু-এক লাইন চুরি করে যারা কবিতা লেখে তাদেরকেই হাতুড়ে কবি বলে।
-এমন ব্যাখা শুনে আবার হাসির হুল্লোর ছুটলো সেখানে।
-রাগে ক্ষোভে আর অপমানের চোটে সারা দেহমন জ্বলতে লাগল সেলিমের। কোনমতে রাগ সম্বরণ করে খুব দম্ভের সাথে বলল সে,
--আরে,কাঞ্চন ভাল কবিতা লেখে বটে,প্রেম করতে তো জানে না। প্রেম না করে সে প্রেমের কবিতা লেখে আর আমি মাসে তিনগন্ডা করে প্রেমিকা পাল্টাই।
কথাটা যে ধ্রুবসত্য,একবাক্যে তা স্বীকার করলো সবাই। দেখতে খুবই হ্যান্ডস্যাম সেলিম,ফলে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যায় মেয়েরা। পরে যখন বুঝতে পারে যে, সে একটা মাকাল ফল,একে একে কেটে পড়ে সবাই।
দাঁতে দাঁত চেপে এতসব গঞ্জনা সহ্য করে বাসায় ফেরার পথে ভাবলো সেলিম,কালা-কাল্টু কাঞ্চন আর যা হোক তারমত প্রেম তো করতে পারে না, আমার মত আর কেউ তাকে ভালবাসে না। প্রেমের ব্যাপারে অন্তত সে আমার সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে না জীবনে।
এটুকু স্বান্তনা মাত্র বুকে চেপে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো সেলিম।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো তার মায়ের কান্নাকাটি আর পাড়া-পড়শি লোকজনের হৈ-হট্টগোলে। ধড়ফড় করে উঠে বাইরে আসতেই ওর মা কাঁদতে কাঁদতে এসে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল হাতে।
চিরকুটে লেখা আছে,
-ভাইয়া,আমি কবি কাঞ্চনের হাত ধরে পালিয়ে গেলাম--
-ইতি,
-তোমার বোন
-সেলিনা।★
-২৬,০২,২০২১ শুক্রবার।