"সুখটান"
প্রকাশ চন্দ্র রায়
- - - একটা টান! যে টানে না,সে কিচ্ছু জানে না একটা টানের কি অপার মহিমা! গিন্নির দৃষ্টি এড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেবল একটা টান দিলাম,আহ্! বুকটা ভরে গেল,সমস্ত অবসাদ দূর হয়ে গেল মাত্র একটা টানে ! স্যরি! ভুল হয়ে গেল বোধহয়! গিন্নির দু'চোখ তো ঘুমে ঢুলু ঢুলু,এতক্ষণে বোধহয় ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে। যাক্,আবার একটা সুখটান দিলাম খুব জোরে । রাত ১:৩০ মিঃ,মনে মনে ভাবলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে ছোট্ট একটা গল্পের প্লট খুঁজবো । গল্প লেখার প্রচন্ড ইচ্ছাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে প্রায় সময় কিন্ত পারিনা লিখতে অন্যান্যদের মত । এ দুঃখ রাখি কোথয়? সিগারেট টানছি আর ভাবছি,ক্যামন ধাঁচের গল্প লিখবো,রোমাণ্টিক,প্যাথেটিক নাকি ভৌতিক ? হঠাৎ খেয়াল হল,আজকের রাতটা তো জ্যোৎস্নালোকিত রাত,এ রাতে ভৌতিক গল্পের প্লট খোঁজা বোকামীই হবে । আবার টানছি,আবার ভাবছি। হঠাৎ করে আমার বাম কাঁধে কার যেন হাতের ছোঁয়া অনুভব করলাম! চমকে উঠলাম খুব! ঘাড় ফিরিয়ে দেখি ওরে বাবা ! যেখানে ভূতের ভয়,সেখানেই সন্ধ্যা হয় !...
চট করে আধখাওয়া সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেললাম দূরে। গিন্নী আফসোসের ভাষায় বলল,
:-ইস্!ফেললে কেন?আমি তো তোমার সুখটান দেখতেই উঠে এলাম।এ পাগল বলে কী?গিন্নীর কথায় হতবাক আমি! বললাম,
:-এ কি বলছ তুমি! জানো না ধূমপানে কত ক্ষতি হয় স্বাস্থ্যের!
:-ঘণ্টা হয়!তুমিই জানো না,ধূমপান অবস্থায় দেখলে তোমাকে কিরকম ম্যানলি লাগে আর এই দৃশ্য দেখে আমি কতটা গর্বিত হই,মনে মনে ভাবী,আমার হাজবেণ্ড কতটা স্মার্ট ।
:-হোয়াট!কি বলছ তুমি?
"সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ" জানো না,ধূমপান মানে বিষপান।
:-রাখো তোমার "সতর্কীকরণ! কতশত জন চেইন স্মোকারকে জানি,আজীবন মিনিট তোপের মত সিগারেট টেনেও কিচ্ছু হয়নি তাঁদের,আবার সারাজীবন একটা টানও টানে'নি তারাই মরেছে লাংস-ক্যান্সার,যক্ষা বা অন্যান্য বক্ষব্যধিতে।
ওর সঙ্গে তর্কে না গিয়ে বললাম,
:-শোন,তুমি হলে আমার লক্ষ্মীবধূঁ,সকল প্রকার অহিতকর কার্যকলাপ থেকে স্বামীকে দূরে রাখাই তো একজন স্ত্রীর প্রধান কর্তব্য। তবুও পূর্বের জের টেনে গিন্নি বলল,
:- ধূলোবালি,বাতাস,পানি, এসব জীবাণু পরিবাহী,আর ধোঁয়া,বিশেষ করে গরম ধোঁয়া জীবাণুর বাহক তো নয়'ই,কিছু কিছু দূর্বলতর জীবাণুকে নাকি ধ্বংস করে,এ কথা তো তুমিই বলেছো ।
;-তা তো বলেছিই পাগলি!তবে কথা আরো আছে,সিগারেটের ধোঁয়ায় যে নিকোটিন থাকে,তা ফুসফুসে জমলে শ্বাস-প্রশ্বাসের যাতায়াতের রন্ধ্রগুলোকে রূদ্ধ করে দেয় ফলে নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি হতে পারে । শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেনে ক্ষত সৃষ্টি করে ।
:-এত দীর্ঘদিন থেকে যে তুমি ধূমপান করে আসছো,কই এখন পর্যন্ত তো তোমার কিচ্ছু হয়নি ?
:-হয়নি সেটা দেহের ইমিউনিটির উপর নির্ভর করে ।
:-ইমিউনিটি!সেটা আবার কী?
:-ইমিউনিটি হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা,রোগ সৃষ্টির সর্বপ্রকার উত্তেজক কারণকে ধ্বংস করে দেয় এই ইমিউনিটি । হোমিওপ্যাথিতে যাকে বলে জীবনীশক্তি বা ভাইটাল ফোস্।
:-আর উত্তেজক কারণটা কী?
:-অতিরিক্ত পরিশ্রম,অতিভোজন,জীবাণু দূষণ,অধিক্ষণ জলে ভেজা বা বা অধিকক্ষণ রৌদ্র লাগানো,অনাহারে থাকা বা আজেবাজে কিছু খাওয়া, এসব উত্তেজক কারণের মধ্যে পড়ে ।
:-তা হলে তো আগুনে পোড়া,জলে ডুবে যাও বা এক্সিডেন্টে হাত-পা ভাঙা,এসবও উত্তেজক কারণের মধ্যে পড়ে ।
:-না,এসব নয়,এসবকে আগন্তুক ব্যাধি বা স্ট্রেঞ্জার ডিজেজ বলে ।
:- ও,বুঝেছি,করোনা ভাইরাস নিশ্চয় একটি উত্তেজক কারণ।
:-ঠিক, এবার বুঝেছ ঠিক।
:-যার ইমিউনিটি প্রবল আছে,তার দেহে করোনা সংক্রমন জনিত অসুবিধাগুলো দেখা দিবে না। আমার কথা শুনে গিন্নী বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেল। চট করে বলে ফেললো
:-তবে লোকজন মাস্ক,স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে কেন?
যৌক্তিক প্রশ্নে আমিও আপ্লুত
হয়ে বললাম,
:-সুন্দর প্রশ্ন করেছো,শোন কার শরীরের ইমিউনিটি কত প্রবল,তা কিন্তু কেউ জানে না,এমনকি চিকিৎসক পর্যন্ত ঠাওর করতে পারেন না এই ইমিউনিটির মাত্রা। এবার
প্রসঙ্গ বদলে ফেলে গিন্নী বলল,
:-আমাদের ইমিউনিটি বেশ প্রবলই আছে,চলো ছাদে গিয়ে দুজনে মিলে সুখটান টানি।
:-একি বলছো গো!তুমি তো ধুমপান করো না!
:-করি না,তবুও আমার সুখটান আছে,তুমি ছাদে চলো । বললাম,
:-না আমি ছাদে যাবো না, আমি গল্পের প্লট খুঁজবো,তুমি ঘরে যাও। এই কথা শুনে গিন্নী অকস্মাৎ আমার বামহাত ধরে মারলো একটা হ্যাঁচকা টান। হুড়মুড় করে পড়ে গেলাম দুজনেই,গিন্নীর বুকের উপড়ে আমি। হাটুতে আর কনুইতে আঘাত পেলাম খুব,ওর কিচ্ছু হয়নি,মাথার পিছনে খোঁপা বাঁধা থাকায় আঘাত থেকে বেঁচে গেছে তার মাথা। আমাকে জড়িয়ে ধরে খিল খিল করে হেসে উঠলো সে,কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে বলল,
;-এই হলো আমার সুখটান ।
মেঘের আড়াল হতে পূর্ণিমার চাঁদটাও বের হয়ে এসে ঝকঝকে জোছনা ছড়াতে ছড়াতে হেসে উঠলো ফিক ফিক করে । ¤ সমাপ্ত